শিরোনাম:

বিআইএর অবদানে বাংলাদেশে বীমা খাত এগিয়ে যাচ্ছে: এনএলআই সিইও মো: কাজিম উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩


মো: কাজিম উদ্দিন, বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের প্রথম বীমা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত বীমা ব্যক্তিত্ব জনাব কাজিম উদ্দিন ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল লাইফের এন্ট্রি লেভেলে যোগদানের মাধ্যমে বীমা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১৪ সাল থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদসহ সুদীর্ঘ ৩৬ বছর ন্যাশনাল লাইফের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সফলতার সাথে সকল ধাপ ও সিঁড়ি অতিক্রম করে ২০২০ সালের ২২ জুন থেকে তিনি কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে অধিষ্ঠিত আছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স এসোসিয়েশন-এর তিন যুগপূর্তিতে বীমা দাবী পরিশোধ, বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। 

আইএনবিঃ বিআইএ’র তিন যুগপূর্তিতে আপনার অনুভূতি কি?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ অনুভূতি চমৎকার, বিআইএ’র অবদানের কারণে বাংলাদেশে বীমা খাত এগিয়ে যাচ্ছে। বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস  বেড়েছে।

আইএনবিঃ গত তিন যুগে বিআইএ’র অবদানকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ বীমা খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে বিআইএ গুরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিআইএ গঠনের পর থেকে সংগঠনটির বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। ইতোপূর্বে যারা সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন তারা সকলেই বীমা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে বিআইএ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ কবির হোসেন এর বিচক্ষণ ও দূরদর্শি চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশের বীমা খাত অনেক এগিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য যে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে বিআইএ অবদান রেখেছে। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যখন অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় তখন বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন এর নেতৃত্বে বিআইএ’র নির্বাহী কমিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে পদ্মা সেতু নির্মাণে বীমা শিল্পের লাইফ ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব পেশ করেন। যদিও পরবর্তীতে পদ্মা সেতু নির্মাণে বীমা শিল্পের লাইফ ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তুবিআইএ’র বিনিয়োগ প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক উৎসাহ যুগিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বীমা শিল্পের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টিপাত করেন। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন এর অনুসন্ধানী দৃষ্টি ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীমা শিল্পে সম্পৃক্ততা ও যোগদানের তারিখ উদঘাটিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীমা শিল্পে যোগদানের তারিখ ১মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করেন।

বিগত দিনে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে বীমা অধিদপÍরের মাধ্যমে বীমা কোম্পানীগুলো পরিচালিত হতো। বিআইএ’র পদক্ষেপের ফলে সরকার বীমা আইন যুগোপযোগী করে  ২০১০ আইডিআরএ গঠন করে। আইডিআরএ গঠন বিআইএ’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আইডিআরএ গঠনের ফলে বীমা কোম্পানীগুলোতে জবাবদিহিতাসহ শৃংখলা ফিরে এসেছে। আগে ছাড়পত্র ছাড়াই এক কোম্পানীর লোক আরেক কোম্পানীতে চলে যেতো। বর্তমানে এখন আর এ সুযোগ নেই।

আইএনবিঃ বিআইএ’র ৩৬ বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি কতটুকু ?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ আইডিআরএ গঠন, নতুন বীমা আইন প্রবর্তন ও জাতীয় বীমা দিবসসহ বীমা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বিআইএ জড়িত। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ কবির হোসেন এর প্রচেষ্টায় জাতীয় বীমা দিবসে কোম্পানীগুলোকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান বিআইএ’র অন্যতম অবদান।  

আইএনবিঃ বীমা সেক্টরকে আধুনিকায়নে বিআইএ কি কি ভূমিকা রাখতে পারে ?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ বীমা সেক্টরকে আধুনিকায়নে বিআইএ ভবিষ্যতে আরো কিছু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে আইডিআরএ ও কোম্পানীগুলোতে সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, ভালো মানের ব্যবসা এবং আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিআইএ পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশাল জনগোষ্ঠির এই দেশে লাইফ বীমা গ্রাহকের হার খুবই নগণ্য। সরকারী কর্মকৌশলের মাধ্যমে লাইফ বীমা গ্রহণ বাধ্যতামূলককরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে পারে বিআইএ। বীমার প্রতি জনগণকে আরো আকৃষ্ট করতে নানামুখি প্রচারণাও চালাতে পারে বিআইএ।  

আইএনবিঃ আগামীতে বীমাখাতকে কোথায় দেখতে চান ?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ বীমা খাত নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। একটা সময় বীমা পেশা ছিল অনেক অবহেলিত। বীমা এখন আর আগের জায়গায় নেই। মানুষ বীমা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে বীমা দিবস। বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বিআইএ’র যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো বীমা কোম্পানীর কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে ব্যাংকাসুরেন্স বিপণন করবে। ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা পলিসি বিপণনের ফলে গ্রাহকের আস্থা সংকট দূর হবে এবং বীমা ব্যবসা অনেক প্রসারিত হবে। যার প্রেক্ষিতে মানুষ নিজের জীবনের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তায় স্বপ্রণোদিত হয়ে বীমা পলিসি গ্রহণ করবে। ব্যাংকাসুরেন্স এর মাধ্যমে বীমা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। আমি বলতে চাই, উন্নত দেশ গুলোতে যেভাবে বীমা খাত এগিয়ে রয়েছে আগামীতে বাংলাদেশের বীমা খাত সেভাবে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা আরো বেশী অবদান রাখবে এ আমার প্রত্যাশা।